শনিবার, ১১ মে, ২০২৪

পরিচিতি

আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ একটি ইলহামী, ইসলাহী, অরাজনৈতিক, দ্বীনী সংগঠন। দ্বীনবিমুখ মানুষকে দ্বীনের ওপর তুলে আনা, সাধারণ মুসলিমদেরকে দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়াবলি শিক্ষা দেওয়া এবং সামগ্রিকভাবে জনসাধারণের মধ্যে ইসলাহ ও হিদায়াতের বার্তা পৌঁছানোই আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ-এর প্রধানতম কর্মসূচি। পাশাপাশি وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ—তোমরা আল্লাহ তাআলার রজ্জুকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো—কালামুল্লাহ শরীফের এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য হলো—মতভেদ আর দলাদলি পায়ের নিচে ফেলে দিয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে দৃঢ় করে তোলা। 

১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার খ্যাতিমান বুযুর্গ খলীফায়ে মাদানী কুতবে দাওরান হযরত লুৎফুর রহমান বর্ণভী (পীর সাহেব বরুণা) সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। তার পর থেকে প্রায় ৯ দশক ধরে ইসলাহী এ সংগঠন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশে মানবতার কল্যাণ, মুসলমানদের দ্বীন-ঈমানের সংরক্ষণ ও মানবিক মূল্যবোধের উজ্জীবনে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। 

লক্ষ্য-উদ্দেশ্য—

আঞ্জুমানের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হলো, কুরআন-সুন্নাহর আলোকে আলোকিত জাতি ও সমাজ গঠন করা এবং এই প্রয়াসের মধ্য দিয়ে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করা। 

পরিচালনা পদ্ধতি—
কুরআন-সুন্নাহ, খুলাফায়ে রাশিদীন ও সালফে সালিহীনের অনুসৃত আদর্শের ভিত্তিতে আঞ্জুমানের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। 

সংগঠনের বৈশিষ্ট্য—

  • আল্লাহভীরু, নীতিবান জাতিগঠনে ভূমিকা রাখা

  • সর্বত্র জ্ঞানের আলো বিতরণপূর্বক সমাজ থেকে অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করা

  • সুসংগঠিত, জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত, কল্যাণসমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখা

  • খোদাদ্রোহী ও বাতিল অপশক্তির মুকাবিলায় উপযুক্ত কর্মপন্থায় কার্যকর প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা

  • আর্ত-মানবতার সেবা করা

  • হক্কানি আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখ ও দ্বীনদার জ্ঞানী-বুদ্ধিজীবীদের অংশগ্রহণ, নেতৃত্ব ও তত্ত্বাবধান গ্রহণ

  • যুগাচাহিদার চ্যালেঞ্জ মুকাবিলায় কার্যকর পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ

ছয় দফা কর্মসূচি—

  • দাওয়াত

  • সংগঠন

  • তালীম

  • তারবিয়াত ও তাযকিয়া

  • খেদমতে খালক তথা সৃষ্টির সেবা

  • আন্দোলন

দাওয়াত : মানুষের কাছে ঐক্যবদ্ধ, সুসংহত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা এবং এর সুন্দর দিকগুলো উপস্থাপন করে আঞ্জুমানে অংশগ্রহণের দাওয়াত দেওয়া

সংগঠন : আঞ্জুমানের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও কর্মসূচির সাথে সহমত পোষণকারী জনশক্তিকে আঞ্জুমানে শামিল করা। বিশেষত ছাত্র ও যুবসমাজকে আদর্শবান ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে আঞ্জুমানের দুটি অঙ্গসংগঠন রয়েছে—১. আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম যুবপরিষদ ২. আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম ছাত্রপরিষদ। এ ছাড়া দ্বীনদার ও আদর্শ নারীজাতি গঠনেও আঞ্জুমানের রয়েছে ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে হেফাজতে ইসলাম’ নামে আরেকটি অঙ্গসংগঠন। 

তালীম : ইসলামী শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার বিশেষত জরুরিয়াতে দ্বীনের জ্ঞান ও সহীহ তরীকায় আমল চর্চা ও অনুসরণের অনুকূল ক্ষেত্র তৈরি করা। এর অধীনে মৌলিক ৫টি কর্মধারা রয়েছে—

ক. পবিত্র কুরআন শরীফের ১০টি সূরা মশক

খ. জরুরি মাসাইল শিক্ষা

গ. ছয় মঞ্জিলের আলোচনা

ঘ. আল মুনাদী

ঙ. পঞ্চাশঘরী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন

তরবিয়ত ও তাযকিয়া : পরিশুদ্ধ জাতিগঠনে আত্মশুদ্ধির সহীহ তরীকা অবলম্বনে ইসলাহী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করা। এর অধীনে মৌলিক দুটি কর্মধারা রয়েছে—

ক. ইউনিয়ন ভিত্তিক চিল্লা

খ. মাসিক শবগুজারী

খেদমতে খালক বা মানবসেবা : আঞ্জুমানের আর্থিক সামর্থানুসারে আর্ত-মানবতার সেবা করা।

আন্দোলন : আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার তথা সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধে সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা

কার্যক্রম—

  • আঞ্জুমান ঘোষিত ছয় দফা কর্মসূচি বাস্তবায়ন 

  • দেশের সর্বত্র সংগঠনের সম্প্রসারণ

  • শায়খে বর্ণভী রহ.-এর মিশনকে উম্মাহের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া

  • দ্বীন-ধর্ম পালনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা

  • ইসলামের অবমাননা ও প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শানে বেয়াদবি ও কটূক্তি তথা মুসলমানদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত এলে এর প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়া এবং সময়োপযোগী কর্মসূচি গ্রহণ

  • ইসলাম বিষয়ক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা

  • দ্বীনের অত্যাবশ্যকীয় জ্ঞান তথা জরুরিয়াতে দ্বীনকে সর্বস্তরের মুসলমানদের কাছে পৌঁছে দেওয়া

সদস্য হওয়ার শর্ত ও নিয়মাবলি—

  • আঞ্জুমানের নির্ধারিত ফরম পূরণ করা

  • আঞ্জুমানের সকল সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচির ব্যাপারে ইতিবাচক হওয়া

  • আঞ্জুমান কর্তৃক ঘোষিত সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নে তৎপর থাকা

  • আঞ্জুমানের সকল কর্মসূচিতে নিঃস্বার্থ ও নিরলসভাবে একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে অংশগ্রহণ করা

  • আঞ্জুমানের কাজে প্রয়োজন অনুযায়ী সময় দেওয়া

  • জীবনের সকল ক্ষেত্রে উন্নত আমল-আখলাক ও সদাচার অবলম্বনের চেষ্টা করা

  • সকল প্রকার অনৈতিক, অনৈসলামিক ও রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা

  • শিরক বিদআত ও গুমরাহী থেকে মুক্ত থাকা

কপিরাইট © ২০২৪ | আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। Developed By Shabaka IT